মহামান্য পোপের ব্যক্তিগত গাড়িচালক দেখলো, মহাশয় রাস্তার ধারে মুখটা বেজার করে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর মালপত্তর সব পায়ের কাছে রাখা আছে।
তব্দা খেলো গাড়ি চালক। “বলছেন কি গুরুদেব? এটাতো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। একে তো আমি ভ্যাটিকেনের পয়সা খাওয়া কম্মচারী, আমার ব্রতই হচ্ছে আপনার শরীর-মোবারককে বইয়ে নিয়ে যাওয়া, তার উপর- ঈশ্বর না করুক- যদি একটা দুর্ঘটনা ঘটে, কী হবে বলুনতো?”
“মহামান্য!” শ্রদ্ধাবনত গাড়িচালক বললো। “আপনি দয়া করে গাড়িতে চড়ে বসুন। আমরা তাতে তাড়াতাড়ি গন্তব্যের দিকে রওনা হতে পারব।”
পোপ অক্ষিপল্লব উল্টে বিরক্তির স্বরে বললেন, “দ্যাখো ছোকরা, ভ্যাটিকেনের গোঁয়ার সভাসদগুলো এই জন্মে কখনো আমাকে গাড়ির স্টিয়ারিংটা ধরতেও দিলনা। আমার বহুদিনের শখ- অন্তত একদিন হলেও মনমাফিক গাড়ি চালানো।” মুখে ছ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের হাসি ফুটিয়ে এবার পোপ মহাশয় বললেন, “আজ তো ভ্যাটিকেনের বিচ্ছুগুলো আশপাশ নেই। আজ ঠিক করেছি আমিই গাড়ি চালাবো, তুমি আমার পাশে বসে থাকবে।”
তব্দা খেলো গাড়ি চালক। “বলছেন কি গুরুদেব? এটাতো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। একে তো আমি ভ্যাটিকেনের পয়সা খাওয়া কম্মচারী, আমার ব্রতই হচ্ছে আপনার শরীর-মোবারককে বইয়ে নিয়ে যাওয়া, তার উপর- ঈশ্বর না করুক- যদি একটা দুর্ঘটনা ঘটে, কী হবে বলুনতো?”
পোপ ফের বিরক্ত হলেন। “তুমি কি মনে করো ঈশ্বর সপ্তমস্তবকে বসে বসে গাঁজা খান, যে মর্ত্যলোকে তার মহত্তম প্রতিনিধিটা গাড়ি উল্টে ডিগবাজি খাবে আর উনি কল্কে টানতে টানতে লুসিফারের সাথে তাস খেলবেন? ঈশ্বরকে এত খামখেয়ালি মনে করো কেন হে বৎস!”
আর কোন জবাব অবশিষ্ট রইল না বেচারা গাড়িচালকের কাছে। সে অনন্যোপায় হয়ে পোপকে স্টিয়ারিং ধরিয়ে দিল, নিজে বসলো পাশের সিটে।
কিছুক্ষণ পর ড্রাইভার বুঝতে পারলো কেলোটা কী। মহাশয় এমনভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন যেন তিনি ইডেনের খোলা উদ্যানে মহাজোশেতে ইউনিকর্ন দাবড়ে বেড়াচ্ছেন। ঠিক এয়ারপোর্ট ক্রস করার সময় গাড়ির গতিবেগ উঠে গেল ঘন্টায় একশো পাঁচ মাইল।
“মহামান্য, সামলে…সামলে…” আর্তনাদ করে উঠলো অসহায় গাড়িচালক।
পোপ মহাশয় নির্বিকারে চালাতেই লাগলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত একটা সাইরেন কানে আসলো তাঁর।
“মহামান্য, সামলে…সামলে…” আর্তনাদ করে উঠলো অসহায় গাড়িচালক।
পোপ মহাশয় নির্বিকারে চালাতেই লাগলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত একটা সাইরেন কানে আসলো তাঁর।
“হে ইশ্বর! এবার তো আমার লাইসেন্সটাই খাঁড়ায় পড়বে। চাকরিটাও বুঝি গেলো।”, ভয়ে ভয়ে বললো গাড়িচালক, কারণ সে দেখলো এক ট্রাফিক পুলিশ হাত উঁচিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে, এগিয়ে আসছে।
ট্রাফিক পুলিশ আসলে পোপ মহাশয় গাড়ির কাঁচ নামিয়ে দিলেন। পুলিশ ভিতরটায় একবার উঁকি মেরে দেখে এক দৌড়ে ফের ছুটে গেল নিজের বাইকের দিকে। রেডিওটা অন করে কেন্দ্রে সে বার্তা পাঠালো, “আমার চীফ এর সাথে কথা বলাটা জরুরি। তাকে লাইনে দিন। ওভার।”
ওইপক্ষে চীফ এসে বললেন, “কি, কোনো সমস্যা….?”
পুলিশ বললো, “একটু আগে একটা গাড়ি আটকেছি, একশো পাঁচ মেইল বেগে ছুটছিল।”
“এ্যাঁ বলো কী?” বিস্মায়াভিভূত চীফ। “ওই চালক শুয়োরটার টুটি চেপে ধরো। লাইসেন্স ছিনিয়ে নাও।”
“কিন্তু এখানে পরিস্থিতিটা একটু জটিল। কারণ গাড়ির চালক যেনতেন লোক নয়। আর গাড়িতে অবস্থানরত দুজনই খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
“গুরুত্বপূর্ণ? তাই নাকি?” চীফ-এর কণ্ঠে অবজ্ঞার সুর।
“হুম। একজনতো মহাগুরুত্বপূর্ণ।”
“কারা? মেয়র আর তার বউ নাকি?”
“আরে ব্যাপারটা আপনি বুঝতে পারছেন না স্যার। এখানে এমন একজন আছেন, যার দিকে চোখ তুলে কথা বলার সাধ্যি- মেয়র তো কোন ছার- এমনকি বার্লুসকোনি কিম্বা বুশেরও নেই।” জোর দিয়ে বললো পুলিশটা।
“মানে? এমন কেউ কি আছে নাকি।” বললেন চীফ।
“হুঁহ, নইলে কি আর বলছি স্যার। স্বয়ং মহামান্য পোপ হলেন তাঁর ড্রাইভার, গাড়িটা পোপ সাহেবই চালাচ্ছিলেন।”
“কী?” অবাক হলে চীফ। “কে সেই দ্বিতীয়জন?”
-“কে আবার….ঈশ্বর!”